ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবর্ধনার নামে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে গোপন বৈঠকের অভিযোগ বিএনপির বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট সময় : ২০২৫-০২-১৮ ০০:২৯:৩৭
সংবর্ধনার নামে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে গোপন বৈঠকের অভিযোগ বিএনপির বিক্ষোভ সংবর্ধনার নামে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে গোপন বৈঠকের অভিযোগ বিএনপির বিক্ষোভ
 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নলছিটি উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম (দোলন মুন্সি) নির্বাচিত হওয়ায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালতলা বাজারে এক বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

মিছিলের নেতৃত্ব দেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. শহিদ খান, সাধারণ সম্পাদক মো. সুলতান আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শহিদ হাওলাদার, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. মাইনুল ইসলাম বাবুল, যুবদল নেতা শহিদ তালুকদার, লিটন মোল্লা, ছাত্রদল সভাপতি সজল তালুকদার প্রমুখ।

মিছিলে বক্তারা বলেন, আমরা সুবিদপুর ইউনিয়নে পুনরায় প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানাই। আওয়ামী লীগের দোসর কাউকে ইউনিয়নের দায়িত্বে দেখতে চাই না। তারা অভিযোগ করেন যে, প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে যুবলীগ নেতাকে প্যানেল চেয়ারম্যান করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অগ্রহণযোগ্য।

এছাড়াও, প্রতিবাদ মিছিল থেকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেওয়া হয়। নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, "পতিত স্বৈরাচার সরকারের কোনো দোসর বিনা ভোটে নির্বাচিত কোনো ভোট ডাকাত এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবে-এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। ভবিষ্যতে আরও বড় কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকে মনে করেন, প্রশাসনিক পদে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তিদের বসানো হলে ইউনিয়নের সুষ্ঠু উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তার ভাইরা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হওয়ায় তাদের ছত্রছায়ায় তিনি বুক ফুলিয়ে স্বৈরাচার সরকারের নেতাকর্মীদের একত্রিত করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন, যেখানে প্রায় ২০০ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে দাওয়াত দিয়ে চিঠি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা মনে করছেন, পতিত সরকারের দোসরদের একত্রিত করে কোনো নাশকতার পরিকল্পনা থাকতে পারে। অন্যথায় কিভাবে তিনি পরিষদের সচিবের মাধ্যমে এবং নিজে এই দাওয়াত দেন? দুপুরে বিএনপি মিছিল করলেও বিকেলে দোলন মুন্সী তার আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে অবস্থান নিলে দ্বিতীয় দফায় বিএনপির সভাপতির নেতৃত্বে তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে, প্রতিবাদ মিছিল চলাকালে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন সাধারণ জনগণের তোপের মুখে পড়েন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে সুরক্ষা দেন। অভিযোগ রয়েছে, সচিব রুহুল আমিন প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক ভূমিকা পালন করেছেন।

স্থানীয়রা বলেন, একজন সচিবের দায়িত্ব হলো নিরপেক্ষ থেকে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা। কিন্তু তিনি আওয়ামী লীগপন্থী দোসরদের পক্ষ নিয়ে কাজ করছেন এবং তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মিটিং করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, যা মেনে নেওয়া যায় না।

সাধারণ জনগণ আরও বলেন, এখনো আওয়ামী লীগের দোসররা কীভাবে এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকেন, আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা দোসর মুক্ত সুবিদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চাই।

বক্তব্যে সুবিদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. শহিদ খান বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিলো দোলন মুন্সী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাওয়াত দিয়ে সংবর্ধনার নামে গোপন মিটিং করার পরিকল্পনা করছে। সে জন্য আমরা স্বৈরাচার সরকারের দোসরকে প্রতিহত করছি। পতিত স্বৈরাচার সরকারের যুবলীগ নেতাকে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে আমরা ইউনিয়নবাসী মানি না, মানতে পারি না।"

এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে এই বিষয়টি কীভাবে সমাধান হবে, তা নিয়ে সাধারণ জনগণ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, যুবদল নেতা নান্নু তালুকদার, আলমগীর হোসেন, সাইফুল খান, তরিকুল ইসলাম মিঠু, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সুমন তালুকদার, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইমরান সরদার হিরু, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তানভীর খান, শ্রমিকদল সাধারণ সম্পাদক বাবুল ফরাজি, মিজান তালুকদার প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের পর থেকে ইউপি চেয়ারম্যানগণ পলাতক থাকায় ইউনিয়নের বাসিন্দারা লিখিতভাবে নিরপেক্ষ প্রশাসক চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেন। এরপর দুই দফা প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল।

কিন্তু পতিত স্বৈরাচার সরকারের ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম দোলন মুন্সী শুরু থেকেই তার ভাইদের ক্ষমতা অপব্যবহার করে সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যানদের পদত্যাগ করিয়ে ভুয়া প্যানেল রেজুলেশন করে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেন। সেখান থেকে ইউনিয়নের প্রশাসকের কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেন মহামান্য হাইকোর্ট। সেই সাথে ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে নিষ্পত্তি করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন এবং সেই মোতাবেক নিষ্পত্তি করা হয়।

নিস্পত্তি শেষে মহামান্য হাইকোর্ট ১নং প্যানেল চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলামকে প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব দিতে নির্দেশ দেন এবং সেই মোতাবেক তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করার কোনো সুযোগ নেই।


নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ